সময় হলো চতুর্থ মাত্রা। এই চতুর্থ মাত্রার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। কারণ, মানুষ ত্রিমাত্রিক জীব। সময়ের তীর সর্বদা ধনাত্মক। এর মানে সময় সামনের দিকে ছুটে চলে, পিছনে ফিরে তাকায় না- একবার কোনো এক মুহূর্ত জীবন থেকে অতীত হয়ে গেলে সেখানে আর ফিরে যাবার উপায় নেই। রাকিব টলমল চোখে স্যার আইন্সটাইনের কথা গুলো শুনছে। হঠাৎ রাকিব প্রশ্ন করলো, মাত্রা জিনিসটা কি? তৎক্ষনাৎ রাকিবের পিঠের উপর পড়লো দুটো বাড়ি। রাকিবের আম্মু চেতিয়ে বলল, “আর ১৫ মিনিট পর জাকির স্যারের ইংরেজীর কোচিং, আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস?” বেচারা রাকিব মনে মনে ভাবলো যে গতকাল এলার্ম সেট না করে ঘুমিয়েও কোনো লাভ হলো না। কি আর করার! বই গুছিয়ে হাটা দিলো জাকির স্যারের ক্লাসে।
রাকিবের গল্প ওখানেই শেষ। সে আর তার ফেলে আসা স্বপ্নে ফিরে যেতে পারবে না। কারণ, সেটা এখন অতীত। অতীত- ভবিষ্যতের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই- মানুষ ত্রিমাত্রিক জীব; সময় চতুর্থ মাত্রার। মানুষ ত্রিমাত্রিক জীব হওয়ার দরুণ মানুষের মস্তিষ্ক ত্রিমাত্রিক বস্তুর ম্যাপিং করতে সক্ষম অর্থাৎ আমরা ত্রিমাত্রায় অভ্যস্ত আর তাই আমরা চতুর্থ মাত্রাকে দেখতে বা উপলব্ধি করতে পারিনা। এখন প্রশ্ন হলো মাত্রা কি? একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে মাত্রাকে সুন্দরভাবে ফিল করা যায়। আর এই মাত্রার সাথে জড়িয়ে আছে স্পেসটাইম বা স্থান-কাল।
একটু আগে বললাম মানুষ ত্রিমাত্রিক জীব। তো এই মানুষের তিনটি মাত্রা কি কি? মানুষের তিনটি মাত্রা হলো দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা যাকে X,Y ও Z দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আমরা সবাই গ্রাফ পেপার দেখেছি। এই গ্রাফ পেপার দ্বিমাত্রিক হয়- শুধু X,Y অক্ষ থাকে, উচ্চতা, Z থাকে না। এই গ্রাফ পেপারের মূল বিন্দু ধরা হয় ‘০,০’ কে। যাই হোক, এবার কাগজের তৈরী দ্বিমাত্রিক গ্রাফ পেপার বাদ দিয়ে ত্রিমাত্রিক বাস্তব জীবনে ফিরে আসি। ধরি, আমার বাসা হলো মূলবিন্দু। আমার এখন যেতে হবে অফিসে। অফিসে যেতে হলে আমার বাসা,মূলবিন্দু হতে দৈর্ঘ্য বরাবর ২০০ মিটার, প্রস্থ বরাবর ১০০ মিটার ও উচ্চতা বরাবর ৫০ মিটার এগিয়ে যেতে হবে। উচ্চতা বরাবর ৫০ মিটার কারণ, ধরে নিলাম আমার অফিস ১২ তলায়। যাই হোক, ২০ মিনিটের মাথায় এখন আমি অফিসে পৌছে রেস্ট নিচ্ছি।অর্থাৎ আমার অবস্থান এখন অফিসে। এখন প্রশ্ন হলো আমার মা যদি এখন আমার বাড়ি, মূলবিন্দু হতে আমার অবস্থান নির্নয় করতে চায়, তাহলে কি কি নিয়ামক লাগবে? দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা? একদমই তাই। কিন্তু এই তিনটি নিয়ামক ছাড়াও আরেকটি নিয়ামক লাগবে, সেটি হলো সময়। কারণ, অফিসে পৌছাতে অবশ্যই আমার নিদিষ্ট সময় লেগেছে। এই সময়ই হলো চতুর্থ মাত্রা। অর্থাৎ বলা যায়, কোনো একটি বস্তুর অবস্থান নিদিষ্ট করতে যে যে নিয়ামক লাগে তাই মাত্রা। এবার প্রশ্ন হলো চতুর্থ মাত্রা সময়কে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না এর মানে কি? আগের উদাহরণে ফিরে যাওয়া যাক। ধরলাম দৈর্ঘ্য বরাবর ১০০ মিটার যাওয়ার পর মনে পরলো আমি ফাইল ভুলে বাড়িতে রেখে এসেছি। তাই আমি যেভাবে এসেছিলাম সেভাবেই বাসায় ফিরে এলাম আর ফাইল নিয়ে আবার রওনা দিলাম।অর্থাৎ, X axis এর সামনে পিছে আমরা মুভ করতে পারি- Y ও Z axis এর ক্ষেত্রেও পারি। তার মানে দৈর্ঘ্যে,প্রস্থ ও উচ্চতার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। কিন্তু, সময়ের ক্ষেত্রে আমরা কেবল সামনেই চলতে পারি। পিছনে ফিরে যেতে পারি না। অর্থাৎ, অতীতের করা ভুল চাইলেই সময়ের পিছনে যেয়ে সংশোধন করতে পারি না।
আলবার্ট আইনস্টাইন স্থানিক তিনটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ,উচ্চতা) আর কালিক একটি মাত্রার (সময়) সমন্বয় ঘটিয়ে স্পেসটাইম বা স্থান-কালের ধারণা দেন। শুধু তাই নয়, তিনি তার রিলেটিভিটি তত্ত্বের মাধ্যমে স্থান ও কালের একটি সম্পর্ক তুলে ধরেন। তা হলো স্পেস বাড়লে সময় কমে, সময় বাড়লে স্পেস কমে যা রিলেটিভিটির ‘দৈর্ঘ্য সংকোচন’ এর মাধ্যমে বোঝা যায়। স্পেসটাইম কি তা বুঝতে হলে অবশ্যই আগে মাত্রা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। তাই, মাত্রা নিয়ে এত কথা বলা।
