সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিজ্ঞানীরা আমাদের সাধারণ জনগণের কাছে তাদের গবেষণার বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করতে আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাঁদের এই মুক্তমণা ভাবের কারণেই কিন্তু আমরা এখন তাঁদের গবেষণার বিষয়বস্তু এবং কর্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সক্ষম হয়েছি যা আগে এতোটা জানা সম্ভব ছিলো না। এখন অনেক বিজ্ঞানী আরো একধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষজন গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সেই বিষয়ে। তারা চাচ্ছেন এই সাধারণ মানুষজন যেন এই গবেষণায় অংশ নিতে পারে এবং ভূমিকা পালন করতে পারে। আর ঠিক এই প্রচেষ্টা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু “Citizen Scientists” বিজ্ঞানে অবদান রাখার জন্য স্বীয় উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছেন।
কিছু মানুষ ভাবেন আরে এই প্রজেক্ট করে কি হবে? এগুলার তেমন মূল্য নেই। আসলে এই কথাগুলো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন। এসব কথা শুনে তোমরা কেউ কখনো দয়া করে অনুৎসাহিত হবে না। বড় বড় রিসার্চ প্রজেক্টে যাওয়ার আগে এই প্রজেক্টগুলো তোমাকে অনেক নতুন জিনিস শিখতে সাহায্য করবে তার পাশাপাশি তোমাকে দক্ষও করে তুলবে। বাইক চালানোর আগে যেমন সাইকেল চালানো শেখা প্রয়োজন। ঠিক তেমনি যেকোনো বড় প্রজেক্টে কাজ করার আগে এই প্রজেক্টগুলো তোমাকে অনেক সাহায্য করবে এবং তোমার অভিজ্ঞতা হবে। অনেক ছাত্ররা এই গবেষণা প্রজেক্টে কাজ করে অনেক নতুন কিছু আবিষ্কার করছে। সমস্ত বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং ছাত্ররা এই প্রজেক্টে কাজ করছে। বিশ্বের অনেক নামকরা বিজ্ঞানীরা এই প্রোজেক্টগুলোর সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। এমনকি NASA ও “NASA Citizen Science Project” চালু করেছে যেন সবাই অংশগ্রহণ করে অবদান রাখতে পারে।
এখন চাইলে যে কেউ এই গবেষণায় সহযোগিতা করতে পারছে বিভিন্ন পাবলিক রিসার্চের মাধ্যমে। তাঁরা সুযোগ করে দিয়েছেন অনেক অনেক বড় ক্ষেত্রে কাজ করার। এখন অনেকের প্রশ্ন তাহলে কিভাবে আমরা কাজ করতে পারবো তাইনা? হ্যাঁ যেকোনো দেশের যেকেউ এই বিষয়গুলোতে কাজ করতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই প্রজেক্টগুলো করলে তোমরা ফিল করতে পারবে কীভাবে বিজ্ঞানীরা এই বিষয়গুলোর উপর কাজ করে থাকেন। তবে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে এই প্রজেক্ট গুলোতে কোনো ডিপ রিসার্চের সংযোগ নেই। এগুলো মূলত একদম বেসিক প্রজেক্টস যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা চান সাধারণ মানুষদেরকে এই গবেষণায় অবদান রাখতে সাহায্য করতে আর তার সাথে বিজ্ঞানে আরো আগ্রহী করে তোলা।
এই কথাগুলো মোটেও আমার নিজের না। বরং International Astronomical Union (IAU) এর ওয়েবসাইট থেকেই তথ্যগুলো নেয়া। নিচে সেই গবেষণার প্রোজেক্টগুলোর তালিকা দেয়া হলোঃ
১) Take a part in Citizen Science Project:
চমৎকার সব বিষয়ের উপর সিটিজেন সাইন্স প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ রয়েছে যা তোমাদের জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো দক্ষ করে তুলতে পারবে।
২) Join a Pro-Am Collaboration:
তোমরা কি জানো যে প্রফেশনাল জ্যোতির্বিদরা এবং এমেচার জ্যোতির্বিদরা মিলে একসাথে প্রায়শই একটি ছোটো রিসার্চ গ্রুপে গবেষণা করে থাকে।
এতক্ষণে তোমাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জেগে গেছে যে কি এই Pro-Am Collaboration তাইনা? এই Pro-Am Collaboration এর সাথে প্রফেশনাল জ্যোতির্বিদরা সরাসরি জড়িত। যখনই কোনো এমেচার জ্যোতির্বিদরা কিছু আবিষ্কার করেন তখন তা সর্বদা প্রফেশনাল জ্যোতির্বিদরা যাচাই-বাছাই করেন এবং সরাসরি যুক্ত থাকেন। এই বিষয়ে পরবর্তী নোটে বিস্তারিত সব লিখবো।
এছাড়াও এমেচার জ্যোতির্বিদদের দ্বারা আবিষ্কৃত ধূমকেতুর জন্য একটি আর্থিক পুরষ্কারও দেয়া হয়ে থাকে।
৩) Process image data from Professional Telescoeps:
আমি নিজেও এই গবেষণা করে থাকি। নিচে আমি একটি প্রেফেশনাল টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত ডেটা থেকে আমি যেই ইমেজ প্রসেস করেছি সেটা দেখালাম তোমাদের বুঝার সুবিধার ক্ষেত্রে। চাইলে তোমরাও এই কাজটি করতে পারো অনায়াসে। অন্য একটি নোটে একদিন বিস্তারিত লিখবো এই বিষয়টি নিয়ে। যেই ছবিটি দেখতে পাচ্ছো তাহলো “Whirlpool Galaxy” এর ছবি। প্রথম ছবিটিতে যেটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার সেখানে আমি পরবর্তীতে সেই ইমেজ ডেটাকে প্রসেস করে এতো চমকপ্রদ গ্যালাক্সি কে ফুটিয়ে তুলেছি। এটাই সবচেয়ে আনন্দ দেয় আমাকে এই কাজ করার জন্য। জ্যোতির্বিজ্ঞানের আসল রূপ এবং সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে পারলেই তুমি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আসল মজাটা অনুভব করতে পারবে। হ্যাঁ তবে সবসময় মজা থাকে এটা ভুল। অনেক সময় খুব ভয়াবহ পরিস্থিতিও চলে আসে।


এগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য প্রজেক্ট রয়েছে তবে সেগুলো কোনো বিগিনার লেভেলের জন্য নয়। সেগুলো একটু এডভান্সড। চেষ্টা করবো পরবর্তীতে এই বিষয়ে একটি নোট লিখার এবং গাইডলাইন দেয়ার।
কথা হবে পরবর্তী নোটে। সবাই ভালো থেকো আর BARC এর সঙ্গেই থেকো।