শীতের রাত। আবির রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।গ্রাম এর দোকানপাট এত দূরে! সামান্য জিনিস কিনতে হলেও যেতে হবে বাজারে।আবিরদের বাড়ি থেকে বাজারে যেতে হলে মাঝখান দিয়ে একটা বিল পেরিয়ে যেতে হয়।এখন শীত তাই পানি নেই।বিলের আশেপাশে ঘরবাড়িও তেমন নেই।পুরো অন্ধকার।আলো বলতে শুধু হাতের টর্চ লাইটটা।যেতে যেতে হঠাত হোচট খায় আবির।টর্চলাইট আর বাজার থেকে কেনা টুথপেস্ট টা দূরে পড়ে থাকে কিন্তু থমকে যায় আবির।আকাশ যে হাজার আলোয় আলোকিত! এভাবে কখোনো আকাশটা দেখা হয় নি আবিরের।এত আলোর মধ্যে হঠাত ওর চোখ যায় তিনটা তারার দিকে।মনে হয় যেন তারা তিনটা একই সরলরেখায় অবস্থিত।তার একটু পাশেই দেখতে পায় তারার একটা ঝাঁক।আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওই দিকে। আবির যে ঝাঁক এর দিকে তাকিয়ে ছিল সেটা আকাশের একটা বিখ্যাত তারকাপুঞ্জ। এর নাম Pleiades। বাংলায় বলা হয় কৃত্তিকা। এছাড়া এতে প্রধানত ৭ টি তারা দেখতে পাওয়া যায় বলে একে সাত বোন বা Seven Sisters ও বলা হয়ে থাকে।

এর প্রধান তারাগুলা হল Sterope,Merope,Electra , Maia,Taygeta,Celaeno এবং Alcyone। প্লিয়াডিস এর অবস্থান Taurus বা বৃষমন্ডলী এর ভিতরে। শীতকালে খুব সহজেই দেখা যায় এটি।

Pleiades শব্দটি এসেছে গ্রীক ভাষা থেকে।এর জন্ম ধারণা করা হয় Plein শব্দ থেকে যার মানে To Sail। এই পুঞ্জটি গ্রীকদের ভূমধ্যসাগর এ যেতে খুবই সাহায্য করত।তবে মাইথোলজি অনুযায়ী রাজা এটলাসের সাত মেয়ের নামে এর তারা গুলা এবং একে সাত বোন বলা হয়।এটি উত্তর গোলার্ধ ও মধ্য দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে বেশী ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়।এটি প্রথম টেলিস্কোপ এর সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করেন গ্যালিলিও গ্যালিলাই।তিনি তার এই পর্যবেক্ষণ একটি স্কেচসহ Sidereus Nuncius এ প্রকাশ করেন ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে।

কৃত্তিকা উজ্জ্বল নীলচে বর্ণের নক্ষত্র দ্বারা পূর্ণ।এতে প্রায় সহস্রাধিক নক্ষত্র রয়েছে যার প্রায় সবগুলোই B Type। এটাকে M-45 নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।এটি গড়ে আমাদের চেয়ে ৪৪৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।এর কেন্দ্রের ব্যাসার্ধ প্রায় ৮ আলোকবর্ষ এবং প্রান্তীয় ব্যাসার্ধ প্রায় ৪৩ আলোকবর্ষ। জ্যোতির্বিজ্ঞান এ এটা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।এটা আমাদের কাছের ক্লাস্টার গুলোর মধ্যে একটা।এর দূরত্ব, আলোর তীব্রতা সবই আমদের জ্যোতির্বিজ্ঞান এ গুরুত্ববহ তথ্য।শুধু বিজ্ঞান কেন? সুন্দরী কৃত্তিকা তার রূপের ঝলকানি দেখিয়েছে সাহিত্যেও।প্রচুর সাহিত্য রচিত হয়েছে একে নিয়ে।ভারতীয় সাহিত্য হোক বা আরবি সাহিত্য,ইংরেজি সাহিত্য হোক বা ফারসি সাহিত্য সবখানেই এর মুক্ত বিচরণ রয়েছে। আবিরের মত হাজার হাজার চোখ তাকিয়ে থাকে প্লিয়াডিস এর দিকে প্রতিদিন কেউ কেউ মুগ্ধ হয়ে,আবার কেউ কেউ টেলিস্কোপ নিয়ে তাকায় অসীম রহস্যের কিছু কূলকিনারা পেতে।তবুও প্রতি রাত্রে কৃত্তিকা আসে তার মহিমা নিয়ে,জানান দেয় এখনও আছে অনেক কিছু জানার বাকি।